নাম তার হাফেজ তানভীর হোসাইন। একজন জন্মান্ধ হাফেজ তিনি। ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘এক গ্রন্থ, এক উম্মাহ’ শিরোনামের আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ৪র্থ স্থান লাভ করাসহ আরো বেশ কয়েকবার বিশেষ বিশেষ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরুস্কার অর্জন করেছেন তানভীর। বাংলাদেশের গর্ব অন্ধ হাফেজে কোরআন তানভীর হোসাইন। প্রতিযোগিতায় ৭৫টি দেশের ১৩০ জন ক্বারি ও হাফেজ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। ইরানের আওকাফ ও জনকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তারা জানিয়েছে, অন্ধ হাফেজদের এ প্রতিযোগিতায় ইরানের প্রতিনিধি আবদুল গাফুর জুহারচি প্রথম হয়েছেন। আর তুরস্কের প্রতিনিধি আহমাদ সারিকায়া এবং তিউনিশিয়ার প্রতিনিধি পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
উল্লেখ্য, জন্মান্ধ হাফেজে কোরআন তানভীর ২০১২ সালেও সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ৭৩ দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। তার বয়স ২০ বছর। তানভীর হুসাইন ৫ বছর থেকে তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে কোরআন মুখস্থ করতে শুরু করেন।
হাফেজ তানভীর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কোরআন হেফজ করার পূর্বে কেউ আমাকে চিনত না, এমনকি আমি নিজেই নিজেকে আবিষ্কার করতে পারিনি; তবে যখন আমি কোরআন হেফজ করলাম, তখন থেকে অনেক বরকত খুঁজে পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোরআন হেফজ করে, যে সকল বরকত আমি খুঁজে পেয়েছি তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইরানে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। আমি বিভিন্ন স্থানে অনেক পুরস্কার ও পদক পেয়েছি; তবে সেগুলো আমার নিকট ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মহান আল্লাহর বরকত, যা আমাকে তিনি দান করেছেন।’
তিনি বলেন, ইরান প্রথমবারের মত শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এটা আমার নিকট অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। হাফেজ তানভীরকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি তো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন বলে আশা করি। পুরস্কারের টাকা দিয়ে আপনার কোনো কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি নিয়ত করেছি পুরস্কারের টাকাগুলো দিয়ে অন্ধদের জন্য একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করব।’
হাফেজ তানভীর যাত্রাবাড়ির প্রখ্যাত হাফেজ ক্বারী নেছার আহমেদ আন নাছিরী পরিচালিত মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার ছাত্র । শিক্ষকরা জানান, তানভীর জন্ম থেকেই অন্ধ, কঠিন সাধনায় স্বল্প সময়েই কোরআনে হাফেজ হন তিনি। বর্তমানে অন্যদেরকেও কোরআনের তালিম দিচ্ছেন।