আপনার বন্ধু সংখ্যা একদমই কম কিংবা বলতে গেলে নেই-ই? আর এটা নিয়ে আপনার কষ্টেরও কোন কমতি নেই? তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্যে। তবে কেবল আপনিই নন, এই সমস্যায় বর্তমানে রয়েছেন পৃথিবীর অনেকেই। আর এর পেছনে কারণ হচ্ছে তারা চৌকস বা স্মার্ট। ঠিক ধরছেন, আপনি এবং আরো অনেক চৌকস ব্যাক্তির জীবনেই বন্ধুসংখ্যা কম। আর আমি নই, এমনটা বলেছেন স্বয়ং বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু কেন? চলুন জেনে আসি উত্তর।
সম্প্রতি ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা খোঁজার চেষ্টা করেন সেই সভ্যতার শুরু থেকে এখন অব্দি ঠিক কোন ব্যপারটি মানুষকে সুখী রাখার প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এই গবেষণাটি চালাতে তারা ১৫ থেকে ২৮ বছরের ভেতরে বসবাসকারী প্রায় ১৫,০০০ মানুষের ওপরে একটি জরিপ চালান আর এই জরিপে পাওয়া যায় যে, যে বা যারা শহরে কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ স্থনে বাস করেন তারা অন্যদের চাইতে কম সুখী থাকেন। তুলনামূলকভাবে একটু কম মানুষের ভীড়ে বসবাসরত মানুষেরা সবচাইতে বেশি খুশি থাকেন। বেশি সন্তুষ্ট থাকেন জীবনকে নিয়ে। কিন্তু এখানে একমাত্র ভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করেন চৌকস মানুষেরা। যাদের ওপরে এই জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব একটা কাজ করেনা। তারা এমনিতেই নিজেদের জীবনকে নিয়ে খানিকটা অসন্তুষ্টিতে ভুগে থাকেন আর তাদের বন্ধুসংখ্যাও হয়ে থাকে কম। সেটা যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক না কেন। কারণ?
এর প্রধান ও অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এই যে, উন্নত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী চৌকস মানুষেরা সাধারণত চেষ্টায় থাকেন একটু বড় কিছু করার। আর এই কারণে নিজের বিশাল স্বপ্নকে সামনে রেখে কাজ করতে শুরু করেন তারা। যেখানে অন্য মানুষেরা চারপাশের মানুষগুলোর সাথে মেলামেশা করে থাকেন, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকেন- এই ভীড়ের বাইরে থাকা স্মার্ট মানুষেরা ব্যস্ত থাকেন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে। বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে। অন্যদের মতন সবার সাথে কাটানোর সময় তারা বের করতে পারেন না বা চান না। তারচাইতে ঘরের কোণায় বসে একটু একটু করে নিজেদের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই হয়ে থাকে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আর তাই অন্যদের চাইতে বন্ধুসংখ্যা কম হয়ে থাকে তাদের।
এছাড়াও, সেই আদিমকালে মানুষ অন্য সবার সাথে খুব ভালো একটা বন্ধন রক্ষা করতো কারণ, সেসময় বেঁচে থাকার জন্যে, জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্যে এর দরকার ছিল খুব বেশি। বর্তমানে নানারকম প্রযুক্তি এসে দিনকে দিন বিষয়টি অন্যরকম করে তুলেছে। এখন আর মানুষকে বেঁচে থাকার জন্যে বা খাবারের জন্যে সবসময় কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়না। অনেক সময় লাগতো যে কাজ করতে সেটা এখন করে ফেলা যায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এক চুটকিতে। খুব বেশি গভীর সম্পর্ক ছাড়াও কেবল প্রযুক্তির দ্বারাই নিজেদের কাজ করে ফেলা যায় এখন। আর এটা খুবই স্বাভাবিক যে অন্যদের চাইতে চৌকস মানুষেরা এই প্রযুক্তিগুলোকে একটু বেশি ভালো করে রপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন নিজেদের জীবনে। ফলে, অন্যদের চাইতে তাদের মানুষের সাথে মুখোমুখি যোগাযোগ কমে গিয়েছে আর পরিচিতের সংখ্যাটা বাড়লেও বন্ধুসংখ্যা কমে গিয়েছে।
না, তারমানে এই নয় যে এই মানুষগুলো বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক রক্ষা করতে ভালোবাসেন না। তারা ভালোবাসেন। তবে সেটার ব্যাপারে খুব বাছ-বিচার করে থাকেন। সেইসাথে অন্যদের সময়ের সাথে সাথে নিজের সময়কেও মূল্য দিয়ে থাকেন।