জন্মের দীর্ঘ ৪৮ বছর পর জন্মদাতাকে সামনাসামনি দেখতে পান তিনি। এ সময় এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়
নিজের অজান্তে প্রতিপালিত হয়েছেন অন্যের বাড়িতে। সেখানে পড়াশোনা করেছেন, বিয়ে হয়েছে। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর বিষয়টি জানতে পেরে জন্মদাতা বাবার খোঁজে বের হয় মেয়ে। খুঁজে পান জন্মদাতাকে। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা গ্রামে।
বিল বেষ্টিত কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা গ্রামের ভগীরথ মধু ১৯৭২ সালে পার্শ্ববর্তী কোনেরভিটা গ্রামের পরিষ্কার বাড়ৈকে বিয়ে করেন। ১৯৭৩ সালে এ দম্পত্তির ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু মেয়ের বয়স যখন ৩ দিন তখন ভগীরথের স্ত্রী মারা যান। সদ্যজাত মা হারা শিশুটিকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় ভগীরথের পরিবার। অবশেষে বেতকাছিয়া গ্রামের লিও মধু ও কামিনী মধু দম্পতির কাছে মেয়েটিকে দত্তক দেওয়া হয়।
ওই দম্পত্তি শিশুটিকে যশোরের পলেন সরকার নামে এক নিঃসন্তান আত্মীয়ের কাছে দিয়ে দেন। পেশায় সঙ্গীত পরিচালক পলেন সরকার ও তার স্ত্রী এঞ্জেলা সরকারের কাছেই বড় হতে থাকে মেয়েটি। তারা শিশুটির নাম রাখেন বেদনা সরকার। বেদনার শৈশবকাল যশোরেই কেটেছে। পরবর্তীতে পলেন সরকার সপরিবারে রাজধানীর মহাখালীতে চলে আসেন।
১৯৮৮ সালে বরিশালের স্বপন মালাকারের সঙ্গে বেদনার বিয়ে হয়। এই দম্পতির লিপিকা মালাকার ও লিখন মালাকার নামে দুই সন্তান রয়েছে।
সাধনার বয়স এখন ৪৮। এতদিন সব ঠিকঠাকই ছিল। সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন পলেন সরকার তার জন্মদাতা নন, তিনি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। বিষয়টি শোনার পরে মায়ের কাছ থেকে (পলেন সরকারের স্ত্রী) জানতে পারেন তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। সব শুনে বেদনা তার বাবা খুঁজতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়ি মিশনে এসে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন তাকে দত্তক নেওয়া লিও মধুর বাড়ি বেতকাছিয়া গ্রামে।
অবশেষে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) জন্মদাতা বাবার সঙ্গে দেখা হয় বেদনা সরকারের। জন্মের দীর্ঘ ৪৮ বছর পর জন্মদাতাকে সামনাসামনি দেখতে পান তিনি। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন বাবা-মেয়ে। তাদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আনন্দ অশ্রু।
বেদনা সরকার বলেন, “পলেন সরকার ও এঞ্জেলা সরকার আমাকে তাদের সন্তানের মতোই আদর-যত্নে বড় করেছেন। তারা কোনোদিন কখনোই বুঝতে দেননি আমি তাদের পালিত মেয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “জন্মের ৪৮ বছর পর আমি বিষয়টি জানতে পারি। তারপর বাবার সন্ধান শুরু করি। দীর্ঘকাল পরে বাবাকে পেয়েছি। এখন আমি সবাইকে নিয়েই সুখে থাকব। এটি আমার কাছে বড় আনন্দের প্রাপ্তি।”
বেদনার জন্মদাতা পিতা ভগীরথ মধু মেয়েকে কাছে পেয়ে আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “এমন প্রাপ্তি হবে, তা আমি ভাবতে পরিনি। আমি মেয়েকে পেয়ে খুবই খুশি। ভবিষ্যতে এ বন্ধন অটুট থাকবে।”